রহস্যের হাতছানি বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য !!!


১. শুরুর কথা
আজ পর্যন্ত অনেককে প্রশ্ন করতে শুনা যায়,
“ভাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যটা কি?”
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের আসলে কোন রহস্যই
নেই। যা রহস্য ছিল তাও অনেক বছর আগেই
সমাধান হয়ে গেছে। বড় রহস্য হচ্ছে এখনও
কেন মানুষ মনে করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের
কোন রহস্য আছে!
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মত
বিষয়গুলো Pseudoscience এর অন্তর্গত। যার
মাঝে আসলে কোন Science নাই কিন্তু
মনে করা হয় আছে তাই হচ্ছে Pseudoscience।
আজও কেন মানুষ এই অপবিজ্ঞানের
পিছনে ঘুরে বেড়ায় তা বড় প্রশ্ন। উত্তর
হতে পারে, মানুষ স্বভাবতই রহস্য পছন্দ
করে, রোমাঞ্চ খুঁজে বেড়ায়। তাই সামান্য কিছু
কাকতালীয়তা আর
অনেকখানি কল্পণা মিলে শয়তানের ত্রিভুজ
তৈরি হয়, আকাশে পিরিচ উড়ে বেড়ায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আজ কল্পবিজ্ঞান
ছাড়া আর কোন জায়গাতেই খাপ খায় না। এই
কল্পকথার দর্পনাশ একবার নয় বারবার
করা হয়েছে, এখানে নতুন করে কিছু
না লিখলেও চলত। কিন্তু বিজ্ঞান স্কুলের
লক্ষ্য হচ্ছে একদল বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ
গড়ে তুলা। যতদিন মানুষের মন
থেকে কুসংস্কার আর অপবিজ্ঞানের ছাপ
তুলে ফেলা না যায় ততদিন মানুষ
বিজ্ঞানমনষ্ক হতে পারে না। তাই দেখা যাক,
এই ব্লগের সাহায্যে কতজন মানুষের মন
থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য মুছে ফেলা যায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মত বিষয়গুলোর
সাথে যুদ্ধ করার জন্য আমাদের একটা শক্ত
অস্ত্র দরকার। সেই
অস্ত্রটা হচ্ছে কাকতালীয়তা ব্যাখ্যা করার
অস্ত্র। অপবিজ্ঞান গুলো স্থায়ীত্ব পায়
কারণ এদের ঘিরে অনেক কাকতালীয়
ঘটনা ঘটে। তাই উল্টো যুক্তি দেওয়া যায়,
“যেহেতু শুধু অপবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই এত
কাকতালীয়
ঘটনা ঘটে তারমানে সত্যি সত্যি কিছু আছে”।
এই যুক্তি ভেঙেই আমরা শুরু করব, “আসলে এত কাকতালীয়
ঘটনা ঘটে দেখেই এরা অপবিজ্ঞান
হয়ে উঠেছে, নাহলে হতে পারত না”।
কাকতালীয়তাকে স্বাগতম
জানাতে পারলে এবার সামনে এগিয়ে যাই।

২. রহস্য
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কি? আমি খুব সংক্ষিপ্ত
ভাষায় বর্ণনা করব, কারণ আমার মনে হয়
যারা এই লেখা পড়ছে তারা খুব ভাল করেই
জানে এটা কি। একটু নাটকীয়তার জন্য এই
অংশটা আমি বর্ণনা করব আলাদাভাবে-
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল! এক রহস্যময় অঞ্চল।
উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব
উপকূলে অবস্থিত এই অঞ্চল, মিয়ামি-
পুয়ের্টো রিকো-বারমুডা কে ত্রিভুজের
তিনটি বিন্দু ধরে যে ত্রিভুজটি পাওয়া যায়
তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। রহস্যময় এই
অঞ্চলে গত পাঁচ
শতাব্দীতে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার
জাহাজ থেকে বিমান, ছিল না তাদের কোন
যান্ত্রিক গোলমাল, না ছিল আবহাওয়ার
সমস্যা বা মানুষের ভূল। মহান নাবিক
কলম্বাস প্রথম এই অঞ্চলের রহস্যের
মাঝে পড়েন, তার নাবিকদের
চোখে পড়ে অন্ধকারে অদ্ভূত আলো। রহস্যময়
এই এলাকায় গোলমাল করে কম্পাসের কাটা,
দিক ঠিক রাখতে পারে না। একজন দুজন নয়
হাজার হাজার অভিযাত্রী এই মতামত
দিয়েছেন। কোন বিপদসংকেত না পাঠিয়েই
এই এলাকা থেকে ১৯১৮ সালে অদৃশ্য হয়ে যায়
আমেরিকান কয়লাবাহী জাহাজ USS Cyclops,
সাথে ৩০৬ জন নাবিক। অদৃশ্য
হয়েছে NC16002 যাত্রিবাহী বিমান, সাথে ৩২
জন মানুষ। চৌদ্দজন মানুষ সহ মার্কিন
যুদ্ধবিমান বহর Flight 19 এর অদৃশ্য হওয়ার
ঘটনা আজও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের
সবচেয়ে রহস্যময় ঘটনাগুলোর একটা। ট্যাঙ্কার
SS V.A. Fogg বিস্ফোরিত হয়ে ডুবে যাওয়ার
পর যখন খুঁজে পাওয়া যায় তখন কোন নাবিক
সেখানে ছিল না, শুধু ক্যাপ্টেনকে তার
ঘরে পাওয়া যায় কফি কাপ হাতে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা আরও
অসংখ্য। সবকিছু দেখলে আমাদের বলতেই হয়,
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর
একটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গল!

৩. রঙের উপর রঙ
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখা কমসম হয়নি।
এই এলাকার অদ্ভূত স্বভাবের উপর প্রথম
লেখাটা সম্ভবত প্রকাশিত হয় ১৯৫০
সালে এডওয়ার্ড ভ্যান উইঙ্কল জোনস এর
লেখনীতে। ফেইট ম্যাগাজিনে জর্জ স্যান্ড
এর “Sea mystery at our back door” প্রবন্ধেই
প্রথম ত্রিভুজ ধারনাটা নিয়ে আসা হয়,
সাথে যুক্ত করা হয় এই এলাকার
সাথে অতিপ্রাকৃতের সম্পর্ক। ১৯৬৪
সালে ভিনসেন্ট গ্যাডিস “The Deadly
Bermuda Triangle” এ উল্লেখ করেন ফ্লাইট ১৯
এর নিরুদ্দেশ কিছুই নয়,
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ঘটে যাওয়া আজব
ঘটনাগুলোর কোন একটা প্যাটার্নের অংশ।
পরের বছরই লেখক এ নিয়ে একটা বই
লিখে ফেলেন “The Invisible Horizon”।
পরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে আরও বই
লিখা হয়েছে। জন ওয়ালেস স্পেনসারের Limbo
of the Lost, চার্লস বার্লিটজের The
Bermuda Triangle, রিচার্ড ওয়াইনারের The
Devil’s Triangle এগুলোর মাঝে অন্যতম।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে যতটুকু রহস্য আর
ইতিহাস আছে তার সামান্য বর্ণনা দেওয়া হল।
পরের অংশে আমরা দেখব রহস্য
আসলে কতটা রহস্য।


৪. Bermuda Triangle Mystery: Solved
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের উপর প্রথম
আঘাতটা আনেন লরেন্স ডেভিড কুশ্যে।
কুশ্যে ছিলেন আরিজোনা স্টেট
ইউনিভার্সিটির একজন রিসার্চ
লাইব্রেরিয়ান। তিন অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ
করে সেগুলোকে এক কর নিয়ে আসেন, তারপর
এই অংশের যে নাম সেই নামে একটা বই
লিখেন। কুশ্যের বই থেকে আমরা নিচের
সিদ্ধান্তগুলোতে আসতে পারি-
# এলাকাটা খুব ব্যস্ত
একটা অঞ্চল। অনেক আগে থেকেই এদিক
দিয়ে প্রচুর পরিমাণ জাহাজের
আনাগোনা চলত, পরেও চলেছে, এখনও চলছে।
দুর্ঘটনা ঘটবেই। বাংলাদেশে যে পরিমাণ
দুর্ঘটনা ঘটে প্রতিদিন তা একটা বড় প্রমাণ।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে,
দেখা গেছে সমুদ্রের অন্যান্য এলাকায়
যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে তার তুলনায়
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভেতর
ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার সংখ্যা এক বিন্দু
অস্বাভাবিক নয়।
# ওদিকে যে পরিমাণ ঝড় হয় তার তুলনায়
দুর্ঘটনা আর নিখোঁজ সংখ্যা মোটেও
অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
#এমন অনেক দূর্ঘটনার
কথা বলা আছে যে গুলো আসলে বারমুডা
ট্রায়াঙ্গলে ঘটেইনি। ঘটেছে এর বাইরের
এলাকায়।
# বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সর্বনাশ করেছেন
যে লেখকরা, তারা অনেকসময় অনেক
নিরুদ্দেশের বর্ণনা করতে গিয়ে ঝড়ের
কথা “ভূলেই” গেছেন, যেগুলো আসলে হয়েছিল
প্রমাণ পাওয়া যায়।
# একটা নৌকা হারিয়ে গেলে রিপোর্ট
আসবেই, কিন্তু সেগুলোর ফিরে আসার
ঘটনাকে হিসেবেই নেওয়া হয়নি।
# লেখকরা এমন অনেক ঘটনার কথা বলেছেন
যেগুলো আসলে ঘটেইনি।
সহজ ভাষায়, কুশ্যে দেখিয়ে দিয়েছেন
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময়তার জন্য এর
রহস্যময়তা দায়ী নয় বরঞ্চ
দোষটা ফেলতে হবে রহস্যময়তা সৃষ্টিকারী
লেখকদের ঘাঢ়ে।
৫. চৌম্বক বিচ্যুতি
ভূচৌম্বক নিয়ে একটু গবেষণা করলেই
একটা কথা পাওয়া যাবে যা হচ্ছে চৌম্বক
বিচ্যুতি বা Magnetic Declination। পৃথিবীর
সব স্থানেই বিচ্যুতি আছে কিছু না কিছু
একটা। পৃথিবীর চৌম্বক মেরু আর ভৌগলিক
মেরু সব জায়গায় এক হয় না। এর
ফলে আলাদা আলাদা স্থানে কম্পাসের
কাটা সরাসরি ভৌগলিক উত্তর দিক
বা দক্ষিণ দিক না দেখিয়ে অন্য একটা দিক
দেখায়। বিচ্যুতি খুব স্বাভাবিক
ঘটনা এবং অনেক অনেক জায়গায় বিচ্যুতি বড়
সমস্যা সৃষ্টি করে ফেলে।
নাবিকেরা সাধারণত বিচ্যুতি সম্পর্কে খুব
ভাল জানে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেহেতু
বিষয়টা জানেনা তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের
ভেতর কম্পাসের আজব আচরণকে অলৌকিক
মনে করে ফেলে। বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।
আরেকটা ধারণা হচ্ছে পৃথিবীর ম্যাগনেটিক
ফিল্ডে কিছু ফুটো আছে,
সে জায়গাগুলোতে কম্পাস উল্টোপাল্টা আচরণ
করেই। শুধু বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নয়, অনেক
জায়গায় কম্পাস উন্মাদ হয়ে যায়
তাতে সন্দেহ নেই।


৬. এলাকার বিশেষত্ব
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে যে পরিমাণ
দূর্ঘটনা ঘটে তার পরিমাণ তুলনামূলক
ভাবে কিছুই নয় আগেই বলেছি। এখন
দূর্ঘটনার পিছনে আরও কি কি কারণ
আছে সেগুলো আমরা দেখব।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ধ্বংস হওয়া জাহাজ
পাওয়া যায় না কেন? বড় কারন হচ্ছে গাল্ফ
প্রবাহ(Gulf Stream)। সমুদ্রের তলদেশ
দিয়ে বয়ে যাওয়া এই অত্যন্ত
শক্তিশালী উষ্ণপ্রবাহ উত্তর
দিকে বয়ে চলেছে।
পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজ বা নৌকা গাল্ফ
প্রবাহে পড়ে পানির টানে অনেক দূর
চলে যায়, যে কারণে এদের খুঁজে পাওয়া প্রায়
অসম্ভব হয়ে পড়ে তা আর বলতে হবে না।
Rogue wave(বাংলা কি হবে? বদমাশ ঢেউ!)
আরেকটা কারণ। এই ঢেউগুলো একাকী ঢেউ।
অনেকগুলো সাধারণ ঢেউয়ের মাঝে হঠাৎ
করে দেখা যায় খুব বড় আর
শক্তিশালী একটা ঢেউকে যারা এতই ভয়ানক
যে এদের আঘাতে জাহাজ ভেঙে যায়।
বিজ্ঞানীরা এদের সম্পর্কে নিশ্চিত
হয়েছেন মাত্র ১৯৯৫ সালে।
তারমানে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিপুল সংখ্যক
জাহাজ ধ্বংস হওয়ার পিছনে বদমাশ
ঢেউগুলোকে দায়ী করাই যায়।
সমুদ্রের নিচে জমে থাকা মিথেন
হাইড্রেটকে অনেকে দায়ী করেন। হঠাৎ
করে নির্গত হয়ে বড় বড়
জাহাজকে এরা ডুবিয়ে দিতে পারে এক
নিমেষে। যদিও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে বড়
পরিমাণ গ্যাস নির্গমনের কোন খবর
পাওয়া যায়নি, তবুও এখন পর্যন্ত মিথেন
হাইড্রেটকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
উপরে নিচে মিলিয়ে ঘটে যাওয়া জানা-
অজানা দূর্ঘটনার কিছু সাধারণ
ব্যাখ্যা আমরা পেয়ে গেছি। এখন কিছু বিশেষ
ঘটনার দিকে নজরপাত করা যাক।





৭. ফ্লাইট ১৯
ফ্লাইট ১৯ বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের নিখোঁজ
কাহিনীগুলোর অন্যতম। পাঁচটি যুদ্ধবিমান
কেন অদৃশ্য হয়ে গেল?
আমরা কারণগুলো খুঁজে বের করি।
বহরটির কোন দূর্ঘটনায় পড়ার
সম্ভাবনা সম্পর্কে সবাই জানত। কারণ বিমান
বহরটির পাইলটদের মাঝে একজন মাত্র
ছিলেন অভিজ্ঞ, বাকিরা সবাই
শিক্ষানবীস। অভিজ্ঞ লেফট্যানেন্ট চার্লস
টেলরের কুখ্যাতি আগে থেকেই ছিল পথ
হারিয়ে ফেলার, এমন ঘটনা আগেও কয়েকবার
ঘটিয়েছেন। অবশ্য আমাদেরও
বুঝতে হবে তখন উন্নতমানের
যন্ত্রপাতি ছিল না, পাইলটকে নির্ভর করত
হত গতি, দিক আর স্মৃতিশক্তির উপর।
বিমান বহর থেকে খুব দুর্বল কিছু
সিগন্যালে টেলর জানান যে তিনি দিক
নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন।
ভূলটা যে তিনিই করেছিলেন
তা পরে সহজে বুঝা গিয়েছে। এমনকি টেলরের
ছাত্ররা পর্যন্ত ধারণা করতে পেরেছিলেন
তার ভূলটা কি হয়েছে। স্থলভূমি থেকে অনেক
দূরে সরে যাওয়ায় জ্বালানী শেষ হয়ে সম্ভবত
বিমানগুলো পানিতে পড়ে যায়। ওই বিশেষ
অ্যাভেঞ্জারগুলো তাদের ওজনের জন্য
বিখ্যাত ছিল, তারমানে পানিতে পড়ার
সাথে সাথে বিমানগুলো তলিয়ে যায়।
ফ্লাইট ১৯ এর খোঁজে যাওয়া দলটিও নিখোঁজ
হয়ে যায় এ ধারণাও ঠিক নয়।
আসলে বিমানটির খোঁজে দুটো মার্টিন
ম্যারিনার গিয়েছিল যাদের একটা ঠিকই
ফিরে আসে। আরেকটাও উধায় হয়ে যায় নি।
সেই সময় আরেকটা জাহাজ
দূরে একটা বিস্ফোরণ দেখতে পায়, যা ছিল
সম্ভবত দ্বিতীয় মার্টিন ম্যারিনার
বিমানটির। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, ওই
বিমানগুলো “উড়ন্ত বোমা” নামেই পরিচিত
ছিল কারণ অনেক রেকর্ডআছে এদের
আকাশে থাকতেই বিস্ফোরিত হয়ে যাওয়ার।
কিন্তু প্রতিটা ঘটনার এত সুন্দর
ব্যাখ্যা থাকার পরও কেন নেভির
রিপোর্টে বলা হল
“অজানা কারণে নিরুদ্দেশ”
হয়েছে বিমানবহরটি? এই ঘটনাও খুব সাধারণ
আর তা হচ্ছে টেলরের মা। দূর্ঘটনার
বর্ণনা করতে গেলেই টেলরের উপর দোষ
ফেলতে হয়, কিন্তু তার মা এর প্রতিবাদ
করেন। শুধু শুধু মহিলার অনূভূতিতে আঘাত
না দিয়ে নেভি তাই এভাবেই
রিপোর্টটা সাজায়।
৮. আরও ভূল
অন্য অনেক কাহিনীরও অপূর্ব
ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। USS Cyclops কেন
তলিয়ে গেল তা আজও রহস্য, কিন্তু
ঘটনাটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলেই ঘটেছে এমন
কথা জোর দিয়ে বলার কোন যুক্তি নেই।
জাহাজ বিভিন্ন কারণে তলিয়ে যেতে পারে,
আর এত ভারি একটা জাহাজ
যে তাড়াতাড়ি ডুবে যাবে তা বলাই বাহুল্য।
অনেকে বলে যে তাহলে কেন
জাহাজটি থেকে কোন বেতার সংকেত
পাওয়া যায় নি? সে সময় বেতার যোগাযোগ
ব্যাবস্থার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা যেত
না সবাই জানে। তার উপর কোন দূর্ঘটনায়
পড়া জাহাজ থেকে বিপদ সংকেত
না পাঠাতে পারা কি খুব একটা অস্বাভাবিক?
NC16002 কেন ধ্বংস হল যখন
আবহাওয়া সম্পূর্ণ ঠিক ছিল? জানা যায়
যে বিমানটির ব্যাটারি ঠিকমত চার্জ
করা ছিল না। তাই মাঝখানে বাতাসের দিক
পরিবর্তনের খবর পাইলটের কাছে হয়ত
পৌছুয়নি যে কারণে সে ভূল করে বসে।
SS V.A. Fogg এর কাহিনীর বর্ণনা করত
গিয়ে স্পেন্সার তার Limbo of the Lost
বইয়ে লেখেন কফি মগ হাতে ক্যাপ্টেন
হাতে নাকি ওই জাহাজে আর
কাউকে পাওয়া যায় নি। আসলে কথাটা সম্পূর্ণ
মিথ্যা। কোস্টগার্ড
ট্যাঙ্কারটি থেকে অনেকমৃতদেহের
ছবি তুলেছে।
কলম্বাসের আজব আলো? তার আসল লগবুক
পরীক্ষা করে ধারণা করা গিয়েছে যে ওটা
স্থানীয় জেলেদের নৌকার আলো আর কিছু
নয়।
এভাবে কাহিনীগুলো লেখকদের
হাতে পড়ে অতিপ্রাকৃত হয়ে উঠলেও
আমরা চিন্তা করলেই বুঝতে পারি এসবের
মাঝে অতিপ্রাকৃত কিছুই নেই।
৯. এখনও রহস্য? 
যখন উন্নতমানের টেকনোলজি বের হয়ে গেল
নেভিগেশনের জন্য, স্যাটেলাইট বসানো হল,
তখন যেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে আর কোন রহস্য
রইল না। শয়তানের ত্রিভুজ আর কোন
রহস্যের জন্ম দিতে পারল না, একেবারেই চুপ
মেরে গেছে। অনেক গবেষণা করেও ওই
অঞ্চলে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায় নি।
এটা কি কোন খেলা?
আজ হাজার হাজার জলযান আর আকাশযান ওই
অঞ্চলদিয়ে কোন রকমের ব্যাঘাত ছাড়াই
চলাচল করে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের
আসলে কোন রহস্য ছিলই না, অস্বাভাবিক
কিছুই ছিল না। থাকলে হঠাৎ করে বন্ধ
হয়ে যেত না।
১০. শেষ কথা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে শয়তানের ত্রিভুজ
বানিয়েছে মানুষ। সাধারণ
ঘটনাগুলোকে সাজিয়ে পরিবর্তন
করে রহস্যগল্প বানিয়ে তুলেছে। সেই
রহস্যগল্পের রহস্য অনেক আগেই ভেদ
হয়ে গিয়েছে।
বাড়তি উত্তেজনার জন্য
কল্পণা করে নিতে পারেন
যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে আসলেও কিছু
একটা আছে। ভিনগ্রহের প্রাণী, হারিয়ে যাওয়
া আটলান্টিস, ফ্লাইং সসার যা খুশি।
তাতে আনন্দ পেলে ক্ষতি নেই মোটেও, শুধু
মনে রাখতে হবে যে হ্যারি পটার
পড়ে যে আনন্দ আমরা পাই তার সাথে এই
আনন্দের খুব একটা পার্থক্য নেই।
তথ্যসূত্র :


আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন।
সবাই অনেক ভালো থাকবেন।
@
হিমালয়

No comments:

Post a Comment

Blog Archive